ওয়ানপ্লাস প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রথম ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস ওয়ানপ্লাস ওয়ান দিয়ে প্রযুক্তি বাজারে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। ওয়ানপ্লাস ওয়ানের চমৎকার সাফল্যের পর প্রতিষ্ঠানটি বাজারে এনেছিল তাদের দ্বিতীয় ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস ওয়ানপ্লাস টু এবং একটি মিড-রেঞ্জ ডিভাইস ওয়ানপ্লাস এক্স যে ডিভাইসগুলোও প্রযুক্তি বোদ্ধাদের মন জয় করে নিয়েছিল সহজেই। বর্তমানে প্রযুক্তি বিশ্ব অপেক্ষা করছে প্রতিষ্ঠানটির পরবর্তী ফ্ল্যাগশিপ ওয়ানপ্লাস ৩ ডিভাইসটিকে আপন করে নেয়ার অপেক্ষায়! প্রযুক্তি বোদ্ধাদের মতে ওয়ানপ্লাস ৩ ডিভাইসটি হতে যাচ্ছে একটি 'পারফেক্ট অ্যান্ড্রয়েড' ডিভাইস। আপনার যদি এ ব্যাপারে মনে কোন সংশয় কাজ করে থাকে তবে পড়ে নিন আজকের এই লেখাটি! তুলে ধরতে চেষ্টা করছি এমন কিছু কারণ যে কারণগুলোর জন্য এই ডিভাইসটি কেনা উচিৎ! চলুন, শুরু করা যাক তাহলে।
চমৎকার মূল্য
আপনারা নিশ্চয়ই এতদিনে জেনেই গিয়েছেন যে OnePlus এর পরবর্তী ফ্ল্যাগশিপ OnePlus 3 ডিভাইসটিতে থাকছে ৬গিগাবাইট র্যাম যার মূল্য নির্ধারিত হয়েছে মাত্র ৩৯৯ ডলার। নিঃসন্দেহে শক্তিশালী এই ডিভাইসটির জন্য নির্ধারিত এই মূল্যকে পারফেক্ট প্রাইসিং বলেই ধরে নেয়া যায়, 'ভ্যালু ফর মানি' যাকে বলে! হ্যাঁ, স্বীকার করছি ৩৯৯ ডলার অবশ্যই অনেক কিন্তু আপনি যদি ডিভাইসটির স্পেসিফিকেশনের দিকে নজর দিয়ে থাকেন তাহলে আপনিও আমার সাথে 'চমৎকার মূল্যের' এই পয়েন্টটিতে একমত হবেন। হতেই হবে! কেননা, ডিভাইসটির স্পেসিফিকেশনের সাথে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ এজ এবং এলজি জি৫ এর অনেক কিছুরই সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই ডিভাইসটির মাত্র ১০৮০পিক্সেল ডিসপ্লে প্যানেলের দিকে আঙ্গুল উঁচু করছেন কিন্তু এভাবে যদি চিন্তা করে দেখা যায় যে মাত্র ৫.৫" আকারের একটি স্ক্রিনে এই ১০৮০পি-ই কতটা শার্প এবং ক্রিস্প এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করতে পারে? তাছাড়া ডিভাইসটিতে যুক্ত করা হয়েছে অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তি যার সম্পর্কে আশা করি আপনারা ইতোমধ্যেই জেনে গিয়েছেন! তাই, সবদিক বিবেচনা করে OnePlus 3 ডিভাইসকে একটি চমৎকার মূল্যের নিখুঁত স্মার্টফোন বলাই যায়!
৬ গিগাবাইট র্যাম!
ডিভাইসটিতে থাকছে ৬ গিগাবাইট র্যাম এবং ৬৪ গিগাবাইট অন-বোর্ড স্টোরেজ! এর পূর্বে আমরা গ্যালাক্সি এস৭ এবং এলজি জি৫ ডিভাইসগুলোতে ৪গিগাবাইট র্যাম দেখেছিলাম এবং ডিভাইসগুলোর মাল্টিটাস্কিং ক্ষমতা ছিল এককথায় অসাধারণ! তাহলে আপনি চিন্তা করুন, এই ডিভাইসটির বাড়তি ২ গিগাবাইট র্যাম আপনার অ্যান্ড্রয়েড এক্সপেরিয়েন্সকে আরও কতটা চমৎকার করে তুলতে পারে!
ফাস্ট চার্জিং সুবিধা
ইদানীং সময়ের স্মার্টফোনগুলো যখন তাদের স্মার্টফোনগুলোতে কোয়ালকমের কুইকচার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তখন ওয়ানপ্লাস প্রতিষ্ঠানটি ফাস্ট চার্জিং এর জন্য ব্যবহার করছে তাদের নিজস্ব ড্যাস চার্জিং প্রযুক্তিটি। নিজস্ব এই প্রযুক্তিটির সম্পর্কে ওয়ানপ্লাস থেকে জানা গিয়েছে যে তাদের এই ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি ৩০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ক্ষমতা যুক্ত ব্যাটারিকে মাত্র ৩০ মিনিটেই ৬০ শতাংশ চার্জ করা সম্ভব। আর কী চাই বলুন তো?
অ্যামোলেড ডিসপ্লে
প্রথম পয়েন্টটিতেই আমি অ্যামোলেডের প্রসঙ্গ টেনেছিলাম কিন্তু একটি পয়েন্টের একটু খানি অংশে চমৎকার এই প্রযুক্তিটিকে বেঁধে রাখতে মন চাইলোনা, তাই অ্যামোলেডের জন্য আরও একটি পয়েন্টই তৈরি করে ফেললাম!
পূর্বে যতগুলো ওয়ানপ্লাসের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস প্রযুক্তি বাজারে আমরা দেখতে পেয়েছি সেগুলোতে সব সময়ই ব্যবহার করা হয়েছে ৫.৫" আকারের ১০৮০পি ডিসপ্লে প্যানেল এবং ওয়ানপ্লাস ৩ এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে রেজ্যুলেশন এবং ডিসপ্লে আকার পরিবর্তন না হলেও এবারের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসটিতে পরিবর্তন করা হয়েছে ডিসপ্লে প্রযুক্তিটির। এবারের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসটিতে প্রতিষ্ঠানটি যুক্ত করেছে একটি অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্যানেল যার ফলে ডিভাইসটি থেকে আরও ভিভিড কালার, আরও গাড় কালো রঙ এবং অবশ্যই চমৎকার ব্যাটারি লাইফ এক্সপেরিয়েন্স করা সম্ভব হবে। এটি একটি অপটিক অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তি যা সবদিক থেকেই চমৎকার ভিউয়িং এক্সপেরিয়েন্স দিতে সক্ষম।
Oxygen OS
আপনি হয়ত শুনে থাকবেন যে ওয়ানপ্লাসের ডিভাইসগুলোতে ব্যবহার করা হয় সায়ানোজেন ওএস তবে বর্তমানে এক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। সায়ানোজেন ওএস এর পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ব্যবহার করছে তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার। ওয়ানপ্লাস অ্যান্ড্রয়েডের উপরের লেয়ারে বর্তমানে ব্যবহার করছে তাদের নিজস্ব অক্সিজেন ওএসটি যা বেশিরভাগ ওয়ানপ্লাস ডিভাইসেই ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং আপনারা যারা ওয়ানপ্লাস ৩ ব্যবহার করতে যাচ্ছেন তারাও ডিভাইসটিতে অ্যান্ড্রয়েডের উপরের লেয়ার হিসেবে অক্সিজেন ওএস পাবেন।
অক্সিজেন ওএস সম্পর্কে সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায় যে স্টক অ্যান্ড্রয়েডের মতই বরং কিছু বাড়তি ফিচার নিয়েই সাজানো হয়েছে এই অক্সিজেন ওএসকে। বলা হয়ে থাকে নেক্সাসের পরেই প্রায় স্টকের স্বাদ বর্তমানে শুধুমাত্র অক্সিজেন ওএস-ই দিয়ে থাকে। মজার বিষয় হচ্ছে, একজন ব্যবহারকারী যে সকল সুবিধা কাস্টম রমে আশা করে থাকেন সেই সব টুইকগুলো অক্সিজেন ওএস এর মাধ্যমে সহজেই করা সম্ভব। তাই আপনি যদি এমন একজন ব্যবহারকারী হন যার পরিচ্ছন্ন কিন্তু কাস্টোমাইজবেল অ্যান্ড্রয়েড এক্সপেরিয়েন্স প্রয়োজন তবে আমি বলব এই অক্সিজেন ওএসটি আপনার ভালো লাগতে বাধ্য!
রুট-ফ্রেন্ডলি
ডিভাইসটিকে রুট করা নিয়ে ব্যবহারকারীকে মোটেই চিন্তিত হতে হবেনা। ওয়ানপ্লাসের সব ডিভাইসের মতই এই ডিভাইসটিকেও রুট এবং এর বুটলোডার আনলক করা যাবে খুব সহজেই। ফলে আপনি যদি কাস্টম রম নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন তাহলে আপনাকে এক্ষেত্রে ডিভাইসটি ভালোই সহায়তা করবে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন