আন-বক্সিং
সিম্ফোনি জেড৭ ডিভাইসটির বক্সটিকে বেশ যত্ন নিয়েই তৈরি করা হয়েছে। কালো রঙ্গের চমৎকার বক্সটির গায়ে প্রায় সকল প্রকার ইনফরমেটিভ লেখাগুলো লাখে হয়েছে সোনালী রঙে। বক্সটি খুললেই প্রথম লেয়ারে একটি পলিতে মোড়ানো মূল ডিভাইসটি আপনি দেখতে পাবেন সবার আগে। এর নিচের লেয়ারেই বিভিন্ন কম্পার্টমেন্টে রয়েছে অন্যান্য প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজ। বক্সটি খুললে আপনি যা পাবেন,
- একটি সিম্ফোনি জেড৭ ডিভাইস
- একটি ট্র্যাভেল চার্জার
- একটি হেডফোন
- একটি ইউএসবি ক্যাবল
- ইউজার ম্যানুয়াল এবং ওয়ারেন্টি কার্ড
- একটি প্ল্যাস্টিক ব্যাক কেস
স্পেসিফিকেশন (সংক্ষেপে)
বিস্তারিত রিভিউ শুরু করার পূর্বে চলুন ডিভাইসটির স্পেসিফিকেশন এক নজরে দেখে নেয়া যাক। ডিভাইসটিতে রয়েছে,
- ডিসপ্লে - ৫.৫" আকারের এফএইচডি আইপিএস ডিসপ্লে, নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৩ প্রযুক্তি।
- প্রসেসর - ১.৩ গিগাহার্জ গতি বিশিষ্ট ৬৪ বিটের একটি মিডিয়াটেক অক্টা কোর প্রসেসর (এমটি৬৭৫৩)।
- জিপিইউ - মালি-টি৭২০ এমপি৩।
- র্যাম ও রম - ভ্যারিয়েন্ট ভেদে ২ এবং ৩ গিগাবাইট র্যাম এবং ১৬ গিগাবাইট অন-বোর্ড স্টোরেজ মেমোরি।
- ক্যামেরা - ১৬ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা এবং ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ফেসিং শুটার।
- ব্যাটারি - ৩০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ক্ষমতাযুক্ত লি-পলিমার ব্যাটারি।
- স্পেশাল ফিচার - ট্রাইলেড ফ্ল্যাশ, আইআর ব্লাস্টার, ৪জি।
ডিসপ্লে
সিম্ফোনি জেড৭ ডিভাইসটিতে রয়েছে একটি ৫.৫ ইঞ্চি আকারের ফুল এইচডি ডিসপ্লে ইউনিট। মাত্র ৫.৫ ইঞ্চি আকারের একটি ডিসপ্লে প্যানেলে ফুল এইচডি রেজ্যুলেশন যুক্ত করায় এবং এর প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় ৪০০ পিক্সেল থাকায় ডিভাইসটির ভিউয়িং এক্সপেরিয়েন্স ছিল অসাধারণ। অন্যদিকে ডিসপ্লেটির দু-পাশে বেশ চিকন ব্যাজেল ব্যবহার করার ফলে ডিভাইসটির বডি-টু-স্ক্রিন রেশিও ছিল চমৎকার! ডিভাইসটির ব্রাইটনেস পরিমিত হওয়ায় সরাসরি সূর্যের নিচেও ব্যবহার করতে কোন রকম সমস্যা হওয়ার কথা না। এছাড়া ডিভাইসটির ভিউয়িং অ্যাঙ্গেলেও আমি কোন নেগেটিভিটি খুঁজে পাইনি। চমৎকার দেখতে এই স্মার্টফোনটিতে ডিসপ্লের নিরাপত্তা বলয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গরিলা গ্লাস ৩ প্রযুক্তি।
ডিভাইসটির ডিসপ্লে ইউনিটের কালার রি-প্রোডাকশন এবং ডিফল্ট কনট্রাস্ট লেভেল চমৎকার হবার পরেও এতে ব্যবহার করা হয়েছে মিরাভিশন (MiraVision) প্রযুক্তিটি যার সাহায্যে আপনি সহজেই তিনটি পিকচার মোড থেকে ইচ্ছেমত মোড পছন্দ করে ব্যবহার করতে পারবেন। মোড তিনটি হচ্ছে Standard, Vivid এবং Custom Mode। আপনি যদি কাস্টম মোড ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনি আপনার ইচ্ছেমত ডিভাইসটির কালার Contrast, Saturation এবং Picture Brightness-এর ভ্যালুগুলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে টিউন করে নিতে পারবেন ।
ডিজাইন এবং বিল্ট কোয়ালিটি
ডিভাইসটি দেখতে অনেকটাই সিম্ফোনি পি৬ সিরিজের স্মার্টফোনগুলোর মত। চমৎকার লুকের প্লাস্টিক বিল্ডের এই ডিভাইসটিকে খুব সাধারণ ভাবেই তৈরি করা হয়েছে। হালকা ব্যাজেলের ডিসপ্লে ইউনিটটি যেমন ডিভাইসটির ফ্রন্ট সাইডকে দিয়েছে চমৎকার লুক ঠিক তেমনি ভাবেই চমৎকার টেক্সচার এবং কিছুটা উঁচু লেভেলে প্লেস করা ক্যামেরা ইউনিটটি ডিভাইসটির ব্যাক সাইডকেও দিয়েছে প্রিমিয়াম লুক। প্রতিষ্ঠানটি তাদের এই জেড সিরিজের পূর্বের স্মার্টফোনগুলোতে মেটাল ব্যবহার করলেও এই ডিভাইসটিকে দিয়েছে প্ল্যাস্টিক বিল্ড কোয়ালিটি। তবে তা সত্ত্বেও সিম্ফোনি জেড৭ ডিভাইসটি একটি চমৎকার ডিসেন্ট লুকিং স্মার্টফোন বলেই আমার মনে হয়েছে।
ডিভাইসটির ঠিক উপরের সামনের অংশে রাখা হয়েছে স্পিকার, ফ্রন্ট ক্যামেরা, প্রক্সিমিটি এবং লাইট সেন্সর।
ডিভাইসটির নিচের দিকে সামনের অংশে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র একটি নোটিফিকেশন লাইট। সিম্ফোনি জেড৭ ডিভাইসটিকে অপারেট করার জন্য কোন ক্যাপাসিটাভ টাচ ন্যাভিগেশন বাটন দেয়া হয়নি, এর পরিবর্তে ডিভাইসটিতে অন স্ক্রিন ন্যাভিগেশন কী ব্যবহার করা হয়েছে।
স্মার্টফোনটির উপর দিকে রাখা হয়েছে চার্জিং পোর্ট, আই আর ব্লাস্টার, হেডফোন জ্যাক। ডিভাইসটির নিচের দিকে আপনি একটি মাইক্রোফোন এবং একটি স্পিকার গ্রিল প্লেস করা হয়েছে।
প্রায় সকল অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের মতই এই ডিভাইসটির পাওয়ার বাটনও ডান দিকে রাখা হয়েছে তবে রকার বাটনটি রাখা হয়েছে এর বা দিকে।
(ডিভাইসটির বাম পাশের ছবি!)
(ডিভাইসটির ডান পাশের ছবি!)
ডিভাইসটির পেছন দিকের একদম উপরে এর রিয়ার ক্যামেরা ইউনিট এবং ট্রাইলেড ফ্ল্যাশ রাখা হয়েছে। ঠিক মাঝখানে ডিভাইসটির মডেল এবং একদম নিচে ব্র্যান্ডিং। সব মিলিয়ে পেছনের অংশটি দেখলে সত্যিই এটিকে একটি ক্যামেরা ফোন বলেই মনে হয়।
সফটওয়্যার
ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড মার্শম্যালো ৬.০। জেড৭ ডিভাইসটিতে সিম্ফোনি নিজেদের ইউআই ব্যবহার করলেও তা প্রায় স্টকের মতই রাখার চেষ্টা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি আপনি একটি-দুটি ছাড়া কোন ব্লটওয়্যারও পাবেন না ডিভাইসটিতে। ডিভাইসটির সফটওয়্যারের কিছু স্ক্রিনশট আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
(অ্যান্ড্রয়েড মার্শম্যালো ৬.০)
(স্মার্টফোনটির লক স্ক্রিন, হোম স্ক্রিন, অ্যাপ ড্রয়ার এবং নোটিফিকেশন)
ক্যামেরা
সিম্ফোনি জেড৭ স্মার্টফোনটিতে রয়েছে সিএমওএস সেন্সর ও ৬ পিস লেন্স বিশিষ্ট একটি ১৬মেগাপিক্সেল আকারের প্রাইমারী ক্যামেরা ইউনিট যার অ্যাপারচার এফ১.৯। জিরো শাটার ডিলে থাকায় স্মার্টফোনটি খুব দ্রুতই ছবি তুলতে পারে বলে প্রতিষ্ঠানটির দাবী। এছাড়াও সেলফি ক্যামেরা হিসেবে ডিভাইসটিতে যুক্ত করা হয়েছে ৫ মেগাপিক্সেলের একটি ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরাও! যাই হোক, এতক্ষণ লিখলাম খাতা-কলমের কথা! চলুন এবার আমার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করা যাক!
প্রায় ১ মাসের কাছাকাছি সময় ধরে এই স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার পর আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই যে ডিভাইসটির ক্যামেরা ভালো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ ভালো। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে ডিভাইসটিকে তাদের ক্যামেরা ফোন হিসেবে ফিচার করতে চেষ্টা করছে ততটা ভালোও নিশ্চয়ই নয়!
ডিভাইসটি পরিমিত আলোতে খুব দ্রুত ছবি তুলতে সক্ষম। কিন্তু আলোর পরিমাণ কিঞ্চিৎ কমে গেলেই পড়তে হয় বিপদে। লো-লাইট পারফর্মেন্স আমার মতে বাজে। পাশাপাশি অল্প আলোতে ডিভাইসটির শাটার ডিলেও লক্ষ্য করা গিয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, বেশ ভালো আলো থাকা সত্ত্বেও কোন এক অদ্ভুত কারণে দুই একবার ছবি তুলতে সমস্যা হয়েছিল আমার। এর কারণ কি হতে পারে তা আমার জানা নেই কিন্তু যথেষ্ট আলো থাকার পরেও ফোকাসিং-এ এবং কালার রি-প্রোডাকশনে সমস্যা হয়েছিল ডিভাইসটির। তবে যদি মূল্য বিবেচনা করা হয়ে থাকে তবে ডিভাইসটির ক্যামেরা ইউনিট পরিমিত আলোতে সন্তোষজনক। আমি নিচে কিছু ক্যামেরা স্যাম্পল দিয়ে দিচ্ছি আপনাদের জন্য, আশা করি আপনারা ডিভাইসটির ক্যামেরা কোয়ালিটি সহজেই বুঝতে পারবেন ছবিগুলোর মাধ্যমে।
( ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে, চলতি বাস থেকে তোলা! বুঝতেই পারছেন পরিমিত আলোতে আসলেই শাটার ল্যাগ আউটপুট দিতে সক্ষম ডিভাইসটি!)
( চলতি বাস থেকে তোলা ছবি! লাইটিংটা লক্ষ্য করুন! মজার ব্যাপার হচ্ছে চলতি বাস থেকে তোলার পরও শতভাগ জুমে কোন রকম ব্লারি অবজেক্ট পাইনি ছবিটি থেকে!)
(জামতৈল রেল ষ্টেশনের কিছুটা সামনে থেকে তোলা! রেললাইন কে না ভালোবাসে!)
(বৃষ্টির পর ছাদে থাকা টবের পাতার গায়ে লেগে থাকা ফোঁটাগুলোকে ক্যামেরা বন্দী করে রাখা হয়েছে!)
(বৃষ্টির পর ছাদের টপে থাকা ভেজা পাতার আরও একটি ছবি!)
(স্টেডি শট!)
(অ্যাপারচার এফ/১.৯ ভালোই, কি বলেন?)
ডিভাইসটির সেলফি ক্যামেরার ক্ষেত্রেও লো-লাইটের সমস্যাটি দেখা গিয়েছে। পরিমিত আলোতে মোটামুটি আউটপুট পাওয়া গেলেও অল্প আলোতে সংরক্ষণ করে রাখার মত ছবি আমি পাইনি। তবে সেলফি ক্যামেরা নি
ভিডিও
ডিভাইসটির ভিডিও রেকর্ডিং কোয়ালিটিতে আমি সন্তুষ্ট। ভিডিওর ক্ষেত্রে সাউন্ডও বেশ জোড়ালই পাবেন আপনি। নিচে আমি ডিভাইসটির মাধ্যমে করা একটি টাইম ল্যাপস ভিডিও যুক্ত করে দিলাম। যদিও টাইম ল্যাপসের মাধ্যমে প্রোপার ভিডিও কোয়ালিটি প্রদর্শন করা সম্ভব নয় তবুও ডিভাইসটির ক্যাপাবিলিটি কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন এর মাধ্যমে।
প্রসেসর, জিপিইউ, র্যাম এবং রম
সিম্ফোনি জেড৭ ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৬৪ বিটের একটি মিডিয়াটেক অক্টা-কোর প্রসেসর যার গতি ১.৩ গিগাহার্জ। নিঃসন্দেহে ডিভাইসটি অপারেট করার সময় প্রসেসর জনিত কোন ল্যাগ আপনাকে এক্সপেরিয়েন্স করতে হবেনা। এছাড়াও এতে রয়েছে মালি-টি৭২০ এমপি৩ জিপিইউ এবং ভ্যারিয়েন্ট ভেদে ২ অথবা ৩ গিগাবাইট র্যাম যা ডিভাইসটির ভিডিও রেন্ডারিংকে করেছে প্রচণ্ড স্মুথ এবং ডিভাইসটির মাল্টিটাস্কিং এক্সপেরিয়ন্সকে করেছে একেবারেই ল্যাগ বিহীন! রিভিউ করার জন্য আমার কাছে সিম্ফোনির একটি ৩ গিগাবাইট র্যামের ভ্যারিয়েন্ট ছিল। প্রতিষ্ঠানটির মতে ৩ গিগাবাইট র্যাম থাকলেও মূলত আপনি ডিভাইসটিতে পাচ্ছেন ২৯১৬ মেগাবাইট র্যাম যার মধ্যে বুটের পর আমি প্রায় ১.৫ গিগাবাইট থেকে ১.৮ গিগাবাইট পর্যন্ত ফাঁকা পেয়েছি।
ডিভাইসটির ১৬ গিগাবাইটের অন-বোর্ড স্টোরেজের মধ্যে আপনি সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবেন ১০.৮৭ গিগাবাইটের মত স্পেস। তবে তাও যদি আপনার কম মনে হয় তাহলে আপনাকে জানিয়ে রাখছি যে ডিভাইসটিতে এক্সটারনাল মেমরি কার্ড ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
বেঞ্চমার্ক
একটি স্মার্টফোনের পারফর্মেন্স পরিমাপ করতে বিভিন্ন ধরণের বেঞ্চমার্কিং টুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমিও এক্ষেত্রে জনপ্রিয় কিছু বেঞ্চমার্কিং টুলগুলো ব্যবহার করে সিম্ফোনি জেড৭ ডিভাইসটির কিছু বেঞ্চমার্ক ফলাফল পেয়েছি। আনটুটু বেঞ্চমার্ক টুলটিতে ডিভাইসটি স্কোর করেছে ৩৬,৯০৭। অন্যদিকে গিকবেঞ্চ ৩ বেঞ্চমার্ক টুলটিতে ডিভাইসটির স্কোর সিঙ্গেল কোরের ক্ষেত্রে এবং মাল্টি কোরের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৫৯২ এবং ২৭৭১ পাওয়া গিয়েছে। সবশেষে, নেনামার্ক ২ অ্যাপলিকেশনটিতে ডিভাইসটি স্কোর করেছে ৫০.৬ এফপিএস। সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, দেখতেই পাচ্ছেন ডিভাইসটি বলা চলে সব ক্ষেত্রেই মোটামুটি ভালো ধরণের স্কোর জেনারেট করতে সক্ষম হয়েছে, ফলে ডিভাইসটি যে বেশ শক্তিশালী তা নিঃসন্দেহে এখন বলে দেয়া যায়।
(আনটুটু বেঞ্চমার্ক স্কোর)
(গিকবেঞ্চ বেঞ্চমার্ক স্কোর)
(নেনামার্ক ২ স্কোর)
গেমিং পারফর্মেন্স
সিম্ফোনি জেড৭ ডিভাইসটিতে অ্যাসফল্ট ৮, মডার্ন কমব্যাট ৫, নোভা ৩ সহ আরও বেশ কিছু এইচডি গেম ফুল গ্রাফিক্সে খেলে দেখা হয়েছে। প্রতিটি গেমেই ডিভাইসটির পারফর্মেন্স ছিল অসাধারণ। ডিভাইসটিতে বেশ কিছুক্ষণ গেম খেলার পরও আমি কোন প্রকার তাপমাত্রা জনিত ইস্যু ফেস করিনি। চলুন, ডিভাইসটিতে গেম খেলার সময় আমার নেয়া কিছু স্ক্রিনশট আপনাদের সাথে শেয়ার করা যাক।
(মডার্ন কমব্যাট ৫)
(অ্যাসফল্ট 8)
নোট - যারা গেম খেলার সময় গেমের গ্রাফিক্সের পাশাপাশি অডিও ইফেক্টও উপভোগ করতে চান তারা কিছুটা হতাশ হবেন কেননা ডিভাইসটির স্পিকারটি নিচের এক সাইডে অবস্থিত হওয়ার কারণে কিছু কিছু গেমের ক্ষেত্রে (যেগুলোর ল্যান্ডস্কেপ রোটেশন লক করা) হাতের তালুর জন্য শব্দ চাপা পরে যাবে।
মাল্টিমিডিয়া
মিউজিক - স্মার্টফোনটিতে একই সাথে গুগল প্লে এবং সাধারণ একটি মিউজিক প্লেয়ার দেয়া হয়েছে। মিউজিক প্লেয়ারটি সিম্পল হলেও বেশ কাজের। তবে আমার কেন যেন মনে হয়েছে ডিভাইসটির অডিও আউটপুট আহামরি কিছু নয়। এই মূল্যের একটি ডিভাইসে ইদানীং সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে চমৎকার অডিও আউটপুট আমরা আশা করতেই পারি।
স্মার্টফোনটির সাথে যে হেডফোনটি দেয়া হয়েছে সেটা ভালোই। ইন-ইয়ার হেডফোনটিতে বাস-এর পরিমাণ আমার কাছে পর্যাপ্ত মনে হয়েছে এবং এর সাউন্ড কোয়ালিটি ওভার অল বেশ ভালো। তবে অডিও আউটপুট তেমন ভালো মনে না হওয়ায় ডিভাইসটিতে আমি গান শুনে মজা পাইনি। বলছিনা যে আউটপুট একেবারেই যাচ্ছেতাই, বরং অনেক স্মার্টফোন থেকে ভালোই তবে এই মূল্যের বা এর চাইতেও কম মূল্যের সিম্ফোনির কিছু স্মার্টফোনেই আমি আরও ভালো আউটপুট পেয়েছি। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, এই ডিভাইসটিতে হেডফোন ব্যবহার করার সময় মাঝে মাঝেই কোন কারণ ছাড়া চলতে থাকা ট্র্যাকগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হেডফোন পরিবর্তন করেও এই সমস্যা আমি ফেস করেছি। হতে পারে আমার কাছে থাকা ইউনিটটির অডিও পোর্টে কোন সমস্যা হয়েছে। তবুও যদি পারেন তবে কেনার সময় কিছুক্ষণ হেডফোনের সাহায্যে গান শুনে দেখতে পারেন।
ভিডিও - ডিভাইসটিতে ফুল এইচডি ভিডিও প্লে করে দেখা হয়েছে, কোন রকম সমস্যা অনুভূত হয়নি। বরং, চমৎকার ডিসপ্লে প্যানেল হওয়ায় কনটেন্টগুলোকে জীবন্ত মনে হয়েছে।
ব্যাটারি লাইফ
সিম্ফোনি জেড৭ স্মার্টফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি নন রিমুভাল ৩০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ক্ষমতাযুক্ত লি-পলিমার ব্যাটারি। স্বাভাবিক ব্যাবহারে আপনি প্রায় ১ দিন বা তারও বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ স্মার্টফোন থেকে। তবে আপনি যদি সেটটি সর্বোচ্চ ব্যবহার করেন তবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মত ব্যাকআপ দিতে সক্ষম এই ডিভাইসটি। ৫.৫ ইঞ্চি আকারের ডিসপ্লে যুক্ত একটি স্মার্টফোনের জন্য সত্যিই এই ব্যাকআপ বেশ সন্তোষজনক। আমার মতে স্মার্টফোনটির ব্যাটারি লাইফ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবেনা ব্যবহারকারীকে।
এছাড়াও ডিভাইসটিতে বেশ কিছু পাওয়ার সেভার অপশন রয়েছে যা সত্যিই চমৎকার কাজ করে থাকে। ব্যাটারি সেভার অন রেখে আমি ১০% চার্জ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বাইরে ঘুরে এসে দেখি মাত্র ১% চার্জ খরচ হয়েছে! এর আগে কোন ব্যাটারি সেভার অপশন ব্যাটারিকে এতটা অপটিমাইজ করতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই, অন্তত আমি যেসকল স্মার্টফোন ব্যবহার করেছি সেগুলোতে এমন দেখিনি।
স্মার্টফোনটির সাথে দেয়া হয়েছে ১ অ্যাম্পিয়ার ক্ষমতার একটি ট্র্যাভেল চার্জার যা কিছুটা সময় নেয় স্মার্টফোনটির ব্যাটারিকে ফুল চার্জ করতে। আমার মতে প্রতিষ্ঠানটির অন্তত এই ডিভাইসটির সাথে একটি ১.৫ অ্যাম্পিয়ার ক্ষমতার চার্জার প্রোভাইড করা উচিৎ ছিল।
কানেকটিভিটি ও সেন্সর
কানেকটিভিটি - ডিভাইসটিতে রয়েছে ৪জি, ইডিজিই, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, জিপিএস।
সেন্সর - সিম্ফোনি জেড৭ ডিভাইসটিতে আপনি এক্সেলারোমিটার, প্রক্সিমিটি, লাইট সেন্সরগুলো উপভোগ করতে পারবেন। ডিভাইসটিতে জায়রোস্কোপ সেন্সর না থাকার ফলে আপনি এতে ভিআর হেডসেটগুলো ব্যবহার করে তেমন আনন্দ পাবেন না।
স্পেশাল ফিচার সমূহ
- আইআর ব্লাস্টার - ডিভাইসটিতে রয়েছে আইআর ব্লাস্টার এবং একটি বিল্ট ইন ZaZaRemote নামের রিমোট অ্যাপলিকেশন। অ্যাপলিকেশনটির নাম কিছুটা বিদঘুটে হলেও এর কাজ খুবই সহজ। ক্যামেরা এবং টেলিভিশনে আমি এই অ্যাপলিকেশনটি ট্রাই করেছি এবং সত্যিই খুব চমৎকার ফলাফল পেয়েছি আমি। এই ফিচারটিকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে কেননা এবারের ঈদের আমার ক্যামেরার ট্রিগার হারিয়ে যাওয়ার পর এটি আমাকে বাঁচিয়েছে বলা চলে। সবসময় হয়ত বা এটি ব্যবহারকারীদের দরকার হবেনা তবে মাঝে মধ্যে বেশ কাজের এই ফিচারটি!
- ন্যাভিগেশন বার কাস্টমাইজেশন - স্মার্টফোনটির ন্যাভিগেশন বারটি আপনি দুটি ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে পূর্বে ব্যবহার করা ফোনগুলোতে অভ্যাস হয়ে যাওয়ার সমস্যাটিকে খুব সহজে ফেস করা যায়।
- নোটিফিকেশন লাইট - নোটিফিকেশন লাইটটি হয়ত আপনাদের কাছে স্পেশাল ফিচারের মধ্যে পড়েনা তবে আমি লিখছি কেননা এতে ব্যবহার করা হয়েছে স্বাভাবিকের চাইতে কিছুটা বড় নোটিফিকেশন লাইট যার ফলে কোন নোটিফিকেশন আসলে সেটা আপনার নজরে না পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আমি পূর্বে যে সকল স্মার্টফোনগুলো দেখেছি সেগুলোতে নোটিফিকেশন লাইট থাকলেও বিভিন্ন রকম সমস্যা ফেস করতে হত। কিছু ছিল বেশ অনুজ্জ্বল আবার কিছু নোটিফিকেশন লাইটের অ্যাসাইনড কালার কিছু কিছু লাইটিং কন্ডিশনে চোখেই পড়ত না! তবে এই ডিভাইসটির বেশ বড় নীল উজ্জ্বল নোটিফিকেশন লাইটে আমার এখন পর্যন্ত কোন নোটিফিকেশন অন্তত মিস হয়নি।
- থিম ম্যানেজার - রয়েছে চারটি প্রিলোডেড থিম। তাই যারা অ্যাডভানস ইউজার না তাদেরও মাঝে মাঝে রুচি বদলানো সহজ হয়ে যাবে।
- মাল্টি গেসচার - ডিভাইসটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের মাল্টি গেসচার অপশন। সেগুলোর আপনি আলাদা আলাদা ভাবে কাস্টোমাইজও করতে পারবেন। তবে ডিভাইসটিতে ডাবল ট্যাপ টু লক থাকলেও ডাবল ট্যাপ টু ওয়েক সুবিধাটি নেই।
- ওটিএ - ডিভাইসটি ওটিএ সাপোর্টেড, অর্থাৎ - ডিভাইসটি আপনি কোন রকমের কম্পিউটারের সাহায্য ছাড়াই আপডেট করতে পারবেন।
- ট্রাইলেড ফ্ল্যাশ - ডিভাইসটির ফ্ল্যাশ ইউনিটটি বেশ কাজের! এমনকি অন্যান্য স্মার্টফোনের মত অনেকক্ষণ ধরে এর ফ্ল্যাশটি ব্যবহার করলে স্মার্টফোনটি গরমও হয়ে যায়না! ইনডোরে কম আলোতে ক্লোজ আপ ছবি তুলতেও ভালোই সাপোর্ট করে থাকে ডিভাইসটির এই ট্র্যাইলেড ফ্ল্যাশ ইউনিটটি।
ভালো দিক এবং মন্দ দিক
সব ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোতেই একই সাথে কিছু ভালো দিক এবং কিছু খারাপ দিক থেকে থাকে। চলুন, ছোট্ট করে ডিভাইসটির ভালো এবং খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
ভালো দিক -
- চমৎকার ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি।
- চমৎকার রিয়ার ক্যামেরা।
- অসাধারণ ব্যাটারি লাইফ।
- স্টক-লাইক এক্সপেরিয়েন্স।
- আইআর ব্লাস্টার।
- বেশ ভালো ডিসপ্লে ইউনিট।
- কর্নিং গরিলা গ্লাস ৩ প্রযুক্তি।
- নোটিফিকেশন লাইট।
- চমৎকার বিল্ড কোয়ালিটি।
খারাপ দিক -
- ওটিজি সুবিধা নেই।
- ভার্চুয়াল রিয়ালিটি সাপোর্ট নেই।
- অডিও কোয়ালিটি খুব একটা ভালো নয়।
- স্পিকারের প্লেসমেন্ট ভালো হয়নি।
- স্পিকারটি খুব একটা জোড়াল নয় তাই মাঝে মধ্যে রাস্তায় থাকলে কল মিস হয়ে যেতে পারে।
মূল্য - চমৎকার সব সুবিধা সম্পন্ন ডিভাইসটির ২ গিগাবাইটভ্যারিয়েন্টের মূল্য বর্তমানে ১১,৪৯০। অন্যদিকে ৩ গিগাবাইটভ্যারিয়েন্টটি বিক্রি হচ্ছে ১২,৩৯০ টাকায়।
সিদ্ধান্ত - আপনি যদি এই মূল্যে চমৎকার একটি প্রিমিয়াম লুকিং স্মার্টফোন ব্যবহার করতে চান যাতে রয়েছে বেশ ভালো রিয়ার ক্যামেরা ইউনিট এবং একটি বড় শার্প ফুলএইচডি ডিসপ্লে প্যানেল তবে এই ডিভাইসটি আপনার জন্য হতে পারে একটি আদর্শ ডিভাইস। মেনে নিচ্ছি ডিভাইসটিতে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে তবে মূল্য অনুযায়ী চিন্তা করলে সেই ত্রুটিগুলোকে নিমিষেই ক্ষমা করে দেয়া সম্ভব। এত কম মূল্যে ৩ গিগাবাইট র্যামের স্মার্টফোনই বা বাজারে কয়টা আছে, বলুন? তবুও বলব, আমার যতটুকু আপনাদের সামনে তুলে ধরার কথা ছিল আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি সেগুলো তুলে ধরার তবে এখন বাকিটা শুধুমাত্র আপনার উপরই নির্ভর করছে। ভালো থাকবেন সবাই।